আমাদের মাঝে ৮৫% ই মানবেন যে তারা জীবনে এইম ইন লাইফ অন্তত কয়েকবার লিখেছেন আর ১৫% যারা আছেন যারা নিজের মনকে ধোকা দেবার অপ্রয়াস চালাবেন; আদতে তিনি মিথ্যা বলবেন। ছোটবেলা চিড়িয়াখানা দেখতে গিয়ে কোকাকোলার লাল সাদা রঙে মোড়ানো গোল দোকানের মাঝে বসে থাকা দোকানি দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী আর সুখী মানুষের আসন পেয়েছিল আমার কচি হৃদয়ে। তারপর অনেক বছর আমি কোনদিন ভাবতে পারিনি যে আমি এমন একটা দোকানঘর ছাড়া অন্য কোন কিছুর জন্য আমি আমার সবকিছু উৎসর্গ করতে পারি।ওয়েল্ডিং কারখানার তির্যক আলো আমাকে এতটাই মোহিত করত যে অনেকদিন ওর দিকে তাকিয়ে নিজের চোখ ফুলিয়ে ফেলেছি। এরপর হয়ত কয়েক দিন চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পাইনি।গরম পানির সেক আর কাল চশমা চোখে পরতে হয়ছে। তারপরও আমি ওই আগুনের ফুল্কি থেকে চোখ সরাতে পারতামনা। যে কোন কিছুর বিনিময়ে আমার এমন একটা কারখানা চাই ই চাই। আমি কসম করে বলতে পারি দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর নারী, সবচেয়ে জানলে ওয়ালা পুরুষ আমাকে এর সিকি পরিমান মোহাবিষ্ট করতে পারবেনা। সারাক্ষন ভাবতাম আমার একটা ওয়েল্ডিং দোকান ছাড়া চলবেই না।
এমন হাজারটা সপ্ন কিশোর বুকে চাপা দিয়ে আমি খাতায় লিখতাম আই ওয়ান্ট টু বি এন এঞ্জিনিয়ার, এন ডক্টর। কেন জানেন? বিদ্যমান কাঠামো ব্যবস্থা! এই উদ্দেশ্যবাদি বিদ্যমান কাঠামো ব্যবস্থা । আমার এইম ইন লাইফে একদিনের বেশি দুইদিন ডাক্তার হলে মাস্টার মশাই বেতের জোরে তার এইম ইন লাইফ বোঝাতে কার্পণ্য করতেন না; তারটা ছাত্র পেটানো।মাস্টারকে আর কি দোষ দিয়ে কি লাভ? আসল অত্যাচারের শুরু পরিবার থেকেই। চিন্তারাজ্য আটোসাটো করার জন্য একের পর এক অদৃশ্য দেয়াল তোলা শুরু হয় জীবনের প্রতিটা পদে; তুমি এ করতে পারবা না, তোমার সে করা মানায় না; তোমার বংশ , তোমার কূল; তোমার অর্থ, তোমার বিত্ত ইত্যাদি আরও অনেক আছে আর হাজার নেই এর জালে বাধা পরে আমাদের মুক্ত ভাবনার রাজ্যগুলো।
ভেবেছেন কি কখনো মাইক্রোসফটের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করে এনকার্টা নামক বিশ্বকোষ প্রজেক্ট প্রায় সম্পূর্ণ ব্যার্থ হয়েছে, অন্যদিকে ইনিশিয়াল বিনিয়োগ ছাড়াই পৃথীবির সর্বাধিক ব্যাবহৃত তথ্য কোষ উইকিপিডিয়া ক্রিয়েট হয়েছে সেচ্ছাশ্রমে? কেন? কারন ক্রিয়েটিভিটি কোন সীমাবদ্ধ গন্ডিতে তার ডালপালা মেলে পুরো সুবাস ছড়াতে পারে না।
অথচ আপনার আমার জীবন নিয়ন্ত্রন কারে কয়েক গাদা বই, কতগুলা আপ্লিকেশন, আর এই উদ্দেশ্যবাদি সমাজ। যেখানে স্থিতাবস্থার (status quo) অন্ধ অনুসরণ জীবনের মূল চালিকা শক্তি হিশেবে গণ্য করা হয়। স্থিতাবস্থার অনুসরন যে খারাপ তা কিন্তু সর্বদা সত্য নয়।
আচ্ছা ভাবুনতো দাংগা বাধলে পাড়ার সুবোধ ছেলেটিও কেন ভাংচুরে লেগে যায় ? ভাংচুর খারাপ জেনেও, সুবোধ ছেলেটি দাংগার মধ্যে ভাংচুর করে। কারন তার পাশের অন্য সবাই এই অন্যায় কাজটি করছে, নিজে না করলে বেমানান লাগে ফলে ওই স্থিতাবস্থার (status quo) অন্ধ অনুসারী হয়ে পরি। আরো মাজার ঘটনা জানতে হলে ফিরতে হবে প্রাচীন গ্রিসে। প্রাচীন গ্রিসে মানুষ মারা গেলে বাড়িতে কান্নার জন্য তথা শোক পালন করার জন্য পেশাদার ভাড়া করত। মৃত্যের কান্নাহীন বাড়ি বেমানান দেখায়। কান্না যেহেতু সংক্রামক (সবার জন্য নয়) তাই বাড়ির অন্যদের কান্না পেতেও পারে। আমরা আমাদের চারপাশের মানুষের হাজারটা ইঙ্গিত (cues) পড়ে চলি আর অবচেতন মনে সেগুলোর মঞ্চায়ন করে চলি, যার ফলশ্রুতিতে আমাদের ভাবনাগুলো ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে ।
We are afraid of defying status quo. ক্রিয়েটভিটি ধ্বংস করার মোক্ষম হাতিয়ার হল এই গন্ডির বাইরে দেখতে না দেবার বারন গুলো, আর ভেড়াব পালের মত দলবেধে চলার কারন গুলো। বিদ্যমান নীতির দোহাই দিয়ে ভিন্নমত নিরুৎসাহিত করা আমাদের বিদ্যামান ব্যবস্থায় অলিখিত নীতিতে যায়গা করে নিয়েছে। যা আমাদেরকে একটি ইয়েস স্যার’রিয়ান কিংবা সহমত ভাই শ্রেণীর মত অর্ধ বর্বর জাতে যায়গা করে দিয়েছে। ব্যাতিক্রম যে একেবারেই নেই তা কিন্তু নয় । তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নো স্যার বলনেওয়ালাদেরকে গোলযোগকারী, জাতভ্রষ্ট, প্রতিবন্ধক ইত্যাদি হাজারটা তকমা দিয়ে থাকি। অথচ Francesca Gino এদের সমন্ধে বলেন “ They are masters of innovation and reinvention, and they have a lot to teach us.”
বিভিন্ন স্টাডি থেকে প্রমানিত যে সাধারণত যারা নো স্যার বলার মানসিকতা রাখে তারা তুলনামূলক বেশী প্রডাক্টিভ এবং প্রতিষ্ঠানের সার্থের জন্য বেশী অনুগত। কর্মক্ষেত্রে যদি ইয়েস স্যার নীতিকে সর্বদা অ্যাপ্রিসিয়েট করা হয়; অর্থাৎ প্রতিস্টানের বিদ্যমান নীতির বর্তায় হয় এমন কোন মতামতকে যদি বিনা বাক্যে অগ্রাহ্য করা হয়। আর ভেড়ার পালের মত আগেরটা যেদিকে চলে পিছেরটাও সেই পথ ধরে নীতিকে যদি উৎসাহিত করা হয় তবে ওই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন যে ভাল না তা স্পষ্ট। আর এই ভেড়ার পাল পরিচালনার মানসিকতা জন্য ভবিষ্যতে শুধু ভেড়াই পাবে- কোন ক্রিয়েটিভ সল্যুশন প্রভাইডার নয়।
ট্রেডিশনাল থর্ট প্রসেস আপনাকে ক্রিয়েটিভ সল্যুশন দেবে না। এর জন্য চাই উন্মুক্ত চিন্তার চর্চা। হ্যাঁ যার বেশির ভাগই হবে মূল্যহীন। দু একটা যা থেকে যাবে তাই যে ফলন দেবে রাখার যায়গা হবে না। লোকজনকে ওয়াইল্ড চিন্তার সুযোগ দিন ফল পাবেন।